ফাঁসির আদেশ পেয়েছে রিফাত ফরাজি, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, মো. হাসান, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়। বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করেন বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ২টার দিকে ।
একই সাথে মামলার এক নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ১ সেপ্টেম্বর বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাগে বিভক্ত অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে (২২) গুরুতর আহত করে। আহত রিফাত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই দিনই মারা যান।
বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ৩৫ মিনিট ধরে চলা রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ সব আসামি উপস্থিত ছিলেন। এসময় নিজের মৃত্যুদন্ডের ঘোষণা শুনেও বিচলিত হননি মিন্নি। তাকে এ সময় আতঙ্কিত বা কাঁদতে দেখা যায়নি।রায় শেষে এমন তথ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এম. মজিবুল হক কিসলু। তিনি বলেন, বিচারক যখন রায় ঘোষণা করেন, রায়ে ফাঁসির আদেশের কথা শুনেও মিন্নি বিচলিত হননি। তাছাড়া চোখের পানিও ঝরতে দেখিনি। আমি ভেবেছিলাম, ফাঁসির আদেশের কথা শুনে মিন্নি অসুস্থ হবেন বা জ্ঞান হারাবেন, কিন্ত তা দেখা যায়নি। তাকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল।এ রায়কে যুগান্তকারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিন্নি যে সত্যিকারের অপরাধী এবং এ হত্যাকান্ডের মূল হোতা, তা এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো।
আসামিদের দণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ভুবন চন্দ্র হালদার।
রায়কে ঘিরে মঙ্গলবার রাত থেকে বরগুনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সজাগ দৃষ্টি রেখেছে পুলিশ। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে। এ ছাড়া র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও টহল দিচ্ছে বরগুনায়।
হত্যাকান্ডের ১ বছর ৩ মাস ৪ দিন পর গতকাল ঘোষিত এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ভ‚বন চন্দ্র হালদার বলেন, রায়ে আমরা খুশি,তবে রায়ের পূর্ণ কপি পাওয়ার পরে যদি মনে করি খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা দরকার, তবে আমরা পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
আসামি পক্ষে মিন্নির আইনজীবী বলেন, মামলা হলে রায় হবে। রায় মেনে নিতে হবে, তবে আমরা রায়ে সংক্ষুদ্ধ। আমরা সাজাপ্রাপ্তদের পরিবারকে পরামর্শ দেবো, দ্রুত সই মহর তুলে উচ্চ আদালতে যেন আপিল করেন। রায়ের পর বিকেল তিনটার দিকে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত পুরুষ ৫ জনকে প্রিজনভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে মিন্নিকে পৃথকভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।