টাকার অর্থাৎ নোটের নানা রঙের রং হতে পারেন কিন্তু টাকার রং কি কখনো কালো হয়? যদিও পৃথিবীর কোথাও কালো টাকা নেই তবুও কালো টাকার কথা হরহামেশাই শোনা যায় আর বাজেট এলে বেশ আলোচনা হয় এ বিষয়ে এবারে দৃশ্যপটে থাকছে বিস্তর আলোচনা
কালো টাকা
কালো টাকা লেনদেনের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের আছে নানা ধরনের চক্র, ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, ঘুষখোর, মানব পাচারকারীর সঙ্গে যুক্ত। এদের একমাত্র উদ্দেশ্য সম্পদ অর্থগত করা কালো টাকার পাহাড় গড়ে তুলে আসলে দুস্কৃতিকারীরা কালোবাজারি কর ফাঁকিবাজ আন্ডারগ্রাউন্ডের দুষ্ট লোকজন। সোনার বাজার টাকার লেনদেন হুন্ডির আচ্ছয় ও কর মুক্ত বাবসার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক দেশ টেক্স হ্যাভেন হিসেবে পরিচিত পেশাজীবীদের অপ্রদর্শিত আয় এর অর্থ কালোটাকা। যেমন চিকিৎসক এবং আইনজীবীরা প্রাইভেট প্রার্থীসহ নানাভাবে যায় করে থাকেন সেটি যদিও কোন চিকিৎসক সেই অর্থ আয়কর রিটার্নের না দেখেন তাহলে সেটি কাল টাকায় পরিণত হবে বাংলাদেশে পাচার করা হয়। এ ছাড়া বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে অনিয়ম করে দাম বেশি বা কম দেখিয়ে করের পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়। এর মাধ্যমে যে অর্থ সরানো হয় সেটিও কালোটাকা, রাজধানী ঢাকাসহ সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী দামে বিক্রি হয় এসব জমি বিক্রয়ের সরকার বাজারমূল্য অনুযায়ী সত্যিকার অর্থে যে দামে ক্রয় বিক্রয় হয় সে দাম অনুযায়ী রাজস্ব পায়না এভাবে এ প্রক্রিয়াটি প্রতিবছর বিপুল টাকাকে কালো তালিকায় নিয়ে যায়।
সাদা টাকা কি?
সাদা টাকা কি? বৈদ্যভাবে অপারজন করে কর পরিশোধ করা টাকায় সাদা টাকা। অনেক সময় বৈধভাবে উপার্জন করে অনেকে কালো টাকার ফাঁদে পড়ে যায় যদি না সে আয় এর উপর কর পরিশোধ না করেন এবং অর্থের সব সরকারি নথিপত্র অন্তর্ভুক্ত করে একজন সাদা টাকার মালিক ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারেন
কালোটাকা দেশের ক্ষতি
কালোটাকা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কে ব্যাহত করে কারণ বিপুল পরিমাণ কর আদায় না হওয়ায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আবার ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে অর্থের কোন সম্পর্ক থাকে না, বৈধ ক্ষুদে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেক বেশি লাভের আশায় লোকজন কালোবাজারে অর্থনীতিতে অংশ নেন কিন্তু মোট জাতীয় উৎপাদন ও মোট দেশজ উৎপাদনের হিসেবের বাইরে থেকে যায় এ অর্থ। এতে জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো অর্থনীতির অন্য হিসাব নিকাশ গুলো ভুল পথে পরিচালিত হয় অর্থনীতি হিসেবে পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারণে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
অবৈধ উপায়ে কালো টাকার উৎস
অবৈধ উপায়ে কালো টাকার উৎস হলেও এ অর্থ নিজেই একটি বড় সংকট কারণ মানুষের হাতে অনেক বেশী কালো টাকা থাকলে তা দুর্নীতি বারে অপরাধ জগতে এসব অর্থ বেশি ব্যবহৃত হয় কালো টাকার অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ঘুষ লেনদেনের অতিমাত্রায় অপরাধীরা আরো মজা পেয়ে যায় তাদের অপরাধ জগতের কার্যক্রম পরিচালনায়। আবার যারা আইন কানুন মেনে বিনিয়োগ করতে চান তারা কালো টাকার সঙ্গে পেরে ওঠেন না নষ্ট হয় অর্থনীতির স্বাভাবিক পরিবেশ।
কালো টাকার যেভাবে সাদা হয়
অনেকভাবে কালো টাকার মালিক দাতাদের অর্থ বৈধ করার চেষ্টা করেন অবশ্য অর্থের আয়কর রিটার্ন ঘোষণা দিয়ে তার সাদা করা হয় এতে তারা অর্থনীতির মূল ধারায় ফিরে আসে। এ কর জিডিপির হার বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের বাজেট ঘাটতি কমাতে সহায়তা করে, অর্থনীতির চাপের প্রভাব কাটাতে সরকার এ সুযোগ নেয় এবং ঘোষিত অর্থ সঞ্চয় পত্র শেয়ার বর্ণ বা অন্যকোন সিকিউরিটিজের উপর 10% হারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয় সরকার। বাংলাদেশে কি পরিমাণ কালো বা অপ্রদর্শিত অর্থ মানুষের হাতে রয়েছে তার কোন প্রকৃত হিসাব নেই এমবি আছে সে বলছে স্বাধীনতার পর থেকে 2017 সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জরিমানা দিয়ে বৈধ করা মোট টাকার পরিমান প্রায় সাড়ে 18 হাজার কোটি টাকা 2020 সালে এক বছরে সব মিলিয়ে প্রায় 15 হাজার কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে। এছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চলতি অর্থ বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই সুযোগ পাওয়া যাবে এছাড়া 10% কর দিয়ে কালো টাকা দিয়ে নতুন শিল্প কারখানা করা যাবে। 2024 সাল পর্যন্ত কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুযোগটিও অব্যাহত রয়েছে।
2000 সালে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণা বলছে 2002-৩ সালে বাংলাদেশে কালো টাকা ছিল মোট জিডিপির 37 দশমিক 7 শতাংশ যা 2011 সালে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী কালো টাকা নিয়ে জরিপ করে এতে দেখা যায় বাংলাদেশ 2010 সালে কালো টাকার পরিমাণ ছিল জিডিপির 62.75 শতাংশ যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সুইজারল্যান্ড এর বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশের টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে 56 কোটি 29 লাখ বাংলাদেশি মুদ্রায় যা 5291 কোটি টাকা যদিও বাংলাদেশ থেকে বৈধ হবে কাউকে সেখানে টাকা নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন সুইস ব্যাংকে টাকা অপ্রদর্শিত বা কালোটাকা এর অধিকাংশ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে সেখানে।
কালো টাকার প্রকৃত পরিমাণ জানা না গেলেও গবেষক অর্থনীতিবিদ মনে করেন দেশে প্রথম কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল 1975 সালে এরপর 17 বার সেই সুযোগ পায় অপ্রদর্শিত অর্থ মালিকরা দেশের 50 বছরের ইতিহাসে কালো টাকার অংক দাঁড়িয়েছে প্রায় 90 লাখ কোটি টাকায়। এমন আরও তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করুন
Your Code
You have to wait 30 seconds.